বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে উঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুতুবদিয়া দ্বীপ শতাব্দী পুরনো ঐতিহাসিক বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত; সেটা আমরা কমবেশি সবাই জানি। দূরসমূদ্রের জাহাজের নাবিকদের পথ দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ শাসনামলে দেশের প্রথম বাতিঘরটি নির্মিত হয়।
কুতুবদিয়া বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ উপজেলা; যা কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলে কুতুবদিয়া দ্বীপের অবস্থান। উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের হিসাবমতে, পুরো দ্বীপের আয়তন প্রায় ২১৫.৮ বর্গকিলোমিটার; যার ৯৩ বর্গকিলোমিটার পানির উপরিভাগে দেখা যায়। অর্থাৎ ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩.২ কিলোমিটার প্রস্থ। এর পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও বাঁশখালী, পেকুয়া এবং মহেশখালী উপজেলা এবং অপর তিন দিকে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত এই দ্বীপটি প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর। শতাব্দীকাল (১৯১৭ সালে) পূর্বে থানায় এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয় কুতুবদিয়া দ্বীপ। কুতুবদিয়া মূলত লবণ ও মৎস্য শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। কুতুবদিয়ার শুঁটকি সারা বাংলাদেশ বিখ্যাত।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
দীর্ঘদিন ধরে কুতুবদিয়া দ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ দ্বীপ সমুদ্র বক্ষ থেকে জেগে উঠে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এ দ্বীপে মানুষের পাদচারণা। “হযরত কুতুবুদ্দীন” নামে এক কামেল ব্যক্তি আলী আকবর, আলী ফকির, এক হাতিয়া সহ কিছু সঙ্গী নিয়ে মগ পর্তুগীজ বিতাড়িত করে এ দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করেন। অন্যদিকে আরাকান থেকে পলায়ন রত মুসলমানেরা চট্টগ্রামের আশেপাশের অঞ্চল থেকে ভাগ্যান্বেষণে উক্ত দ্বীপে আসতে থাকে। জরিপ করে দেখা যায়, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়া, চকরিয়া অঞ্চল থেকে অধিকাংশ আদিপুরুষের আগমন। নির্যাতিত মুসলমানেরা কুতুবুদ্দীনের প্রতি শ্রদ্ধান্তরে কুতুবুদ্দীনের নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরণ করেন “কুতুবুদ্দীনের দিয়া”, পরবর্তীতে ইহা ‘কুতুবদিয়া’ নামে স্বীকৃতি লাভ করে। দ্বীপকে স্থানীয়ভাবে ‘দিয়া’ বা ‘ডিয়া’ বলা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এই দ্বীপে বসবাস শুরু করে। বর্তমানে (২০১৭) এই দ্বীপের বয়স ৬০০ বছর পেরিয়ে গেছে। এই দ্বীপের আয়তন প্রায় ৩ ভাগের ২ ভাগ কমে গেছে এবং এখনও সাগরের ঢেউ এর প্রভাবে ভেঙ্গে সমুদ্রে পরিণত হচ্ছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর-কন্যা কুতুবদিয়া দ্বীপটি।